হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। মামলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে আটকে রেখে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ আনা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে জান্নাত আরা ঝর্ণা বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
সোনারগাঁও থানা পুলিশ সূত্র জানায় নারী ও শিশু নি’র্যা’তন দমন আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধ’র্ষ’ণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ দিকে মামলা হওয়ার পর সোনারগাঁও থানার পুলিশ ঝর্ণাকে মেডিক্যাল টেস্ট করার জন্য
পুলিশ পাহারায় দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে এসে মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। আগামীকাল রোববার ঝর্ণার মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়া যাবে। অন্য দিকে এ মামলায় মামুনুল হককে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
জান্নাত আরা ঝর্ণা বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন। পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অপর দিকে ঝর্ণা নিজে স্বেচ্ছায় থানায় এসে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আসার পর তার মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এসব তথ্য জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।মামলার এজাহারে বলা হয়, রিসোর্টকাণ্ডের পর পরিচিতদের বাসায় জোরপূর্বক আটকে রাখা হয় তাকে। এ সময় তাকে তার বাবা-মায়ের সাথেও যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। প্রথম স্বামী শহীদুলের সাথে সংসার ভাঙার মাস্টারমাইন্ডও ছিল মামুনুল।
মামুনুল হকের সাথে পরিচয়ের বর্ণনা দিয়ে ঝর্ণা তার এজাহারে বলেন, আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার সাথে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায়
পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে সে কৌশলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে। মামুনুল হকের কুমন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্য জীবন চরম বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপড়েনের মধ্যে তার পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য আমাকে প্ররোচিত করলে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর শুরুতে আমাকে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায়ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, মামুনুল হক ঘোরাঘুরির কথা বলে সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হা’ম’লা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় আটকে রাখেন। কারো সাথে যোগাযোগও করতে দেননি।
জান্নাত আরা ঝর্ণা মামুনুল হকের বিচার দাবি করে বলেছেন, আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, আমি এর বিচার চাই। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন তিনি এবং আমাকে বিয়ে করবেন বলে বারবার আশ্বাস দিলেও করেননি। বিয়ে করবেন এই প্রলোভনে ২০১৮ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন হোটেল রিসোর্টে নিয়েছেন আর সময় পার করেছেন তবে বিয়ে করেননি।
তিনি বলেন, শুধু আমার সাথে এ অন্যায় করেই শেষ হয়নি আমাকে দিনের পর দিন তিনি ব্যবহার করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার দুপুরে ঝর্ণার মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়েছে। আগামী ২ মে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তখন এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। আপাতত কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।